করোনাভাইরাসঃ প্যানিকের কার্যকরী টনিক

করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী, বাদ যায় নি বাংলাদেশও। আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি করোনাভাইরাস সৃষ্ট রোগের নাম কোভিড-১৯, যা SARS n-Cov বিগ ফ্যামিলির রূপান্তর। ভাইরাসটি রীতিমতো অনেকের দুশ্চিন্তার প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষত, যারা উদ্বেগজনিত ব্যাধিতে আক্রান্ত তাঁদের জন্য বড় বিপদ বয়ে আনতে পারে। তবে আপনি নিশ্চয়ই হাল ছেড়ে দেওয়ার মানুষ নন, নিজেকে কিভাবে করোনাভাইরাস ভয়ভীতি ও দুশ্চিন্তামুক্ত রাখবেন সে নিয়ে কিছু পরামর্শ শেয়ার করছি।

আপনি আদৌ উদ্বেগ কিনা সেটা জানুন

এটি একটি ভীতিজনক সময়। আমরা বিশ্বব্যাপী মহামারীর মধ্যে আছি, শহরগুলো এমনকি পুরো দেশ বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের মধ্যে এমন কিছু অঞ্চল রয়েছে যা ইতিমধ্যে করোনাভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। আমরা সবাই শিরোনাম দেখছি এবং ভাবছি, “এরপরে কী হবে?” 

অনেকের ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো, মনে এক অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। আমরা জানি না সামনে আদৌ ভয়াবহ কিছু হবে কিনা, কিন্ত এই অনিশ্চয়তা আমাদের মাঝে অনুমান করতে বাধ্য করছে। তবে আপনার এই উদ্বেগ এবং ভয়কে দূর করতে আপনি অনেক কিছুই করতে পারেন – এমনকি এই অনন্য সংকটের মুখেও। সেটা কিভাবে? আসুন জেনে নিই। 

সচেতনতা ও কিছু পরামর্শ

  • আশপাশে ঘটে যাওয়া বিষয় সম্পর্কে অবহিত থাকুন, তবে বার বার নিউজ পোর্টালে চোখ বুলানো থেকে বিরত থাকুন। নির্ভরযোগ্য উৎস ছাড়া স্বাস্থ্যবিষয়ক কোনো পরামর্শ গ্রহণ করবেন না, এক্ষেত্রে ওয়ার্ড হেলথ অর্গানাইজেশন(WHO) এর পরামর্শ সর্বাপেক্ষা গৃহীত। 
  • সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো কিছু শেয়ারের আগে তথ্য ভালোভাবে যাচাই করে নিন, অন্যথা আপনি যা শেয়ার করছেন তা মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়াবে, মানুষ আতঙ্কিত হবে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম অনুসরণ করুন। যেমনঃ Reuters, Aljazeera, Daily Mail, The Guardian, BBC । বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ খবর পেতে চোখ রাখুন The Daily Star, The Business Standard ওয়েবসাইটে।

বাসায় সারাদিন কি করবেন?

সারাক্ষণ বাসার মধ্যে নিশ্চয়ই বিরক্ত বা একঘেয়েমি লাগছে? হ্যাঁ, লাগাটা স্বাভাবিক।আমরা অনেকেই হয়তো দীর্ঘসময় বাসায় কাটানোতে অভ্যস্ত নই। এই দীর্ঘসময়ে চাইলে অনেক কিছুই করা যেতে পারে। কিভাবে? আসুন জেনে নিই।

বাসায় অবস্থান করছেন মানে আপনি এই করোনাভাইরাস মোকাবেলায় একজন যোদ্ধা।যেহেতু করোনাভাইরাস রেস্পেরেটরি ড্রপলেট ও কমিউনিটি লোকাল ট্রান্সমিশনের মাধ্যমে একজনের থেকে অন্যজনে ছড়িয়ে পড়ছে। কাজেই, আপনার বাসায় অবস্থান এই করোনাভাইরাস ট্রান্সমিশনে বাঁধা পড়ছে। সুতরাং, আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ এই যুদ্ধে একজন সৈনিক হিসেবে অংশ নেওয়ার জন্য।

সারাবছর আমাদের বিভিন্ন অযুহাত থাকে যে, ব্যস্ততার কারণে কাজটি করতে পারি নি। এখন কিন্ত এই অযুহাত মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। তাই নিজের স্কিল ডেভেলপমেন্টে ফোকাস করুন। আপনার আগ্রহ যেদিকে সেদিকেই এগিয়ে চলুন, হোক সেটা রান্না করা কিংবা চিত্রাংকন।

  • অনলাইনে কিছু প্রশিক্ষণ নিতে নিশ্চয়ই ক্ষতি নেই? বিভিন্ন ওয়েবসাইটে (edx, codecademy, khan academy, alison, coursera, skillshare, udacity) আপনি ফ্রি রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমেই বিভিন্ন টপিকে স্কিল ডেভেলপমেন্ট কোর্সগুলো করতে পারেন।
  • বই পড়তে ভীষণ পছন্দ? তাঁদের নিশ্চয়ই বই পড়া নিয়ে কিছু বলতে হবে না। যাদের বই পড়ার অভ্যাস নেই তাঁরা এই সুযোগে অভ্যাস গড়ে নিতে পারেন। যেকোনো ধরণের বই হতে পারে জ্ঞানের উৎস। প্রতিদিন নিয়ম করে মুসলিম ভাই ও বোনেরা কুরআন, হাদিস চর্চাও করে নিতে পারেন।
  • বাগান বিলাসিতা নিঃসন্দেহে একটি ভালো গুণ। বারান্দায় বা ছাদে ফুল-ফল গাছগুলোর যত্ন, এতদিন হয়তো আপনার পরিবারের অন্য কেউ করেছে। এইসময় না হয় আপনিই গাছের যত্ন নিলেন ও নিয়ম করে পানি দিলেন।
  • শরীরের প্রতি যত্নশীল হওয়ার কথা সেই ছোটবেলা থেকেই গুরুজনের উপদেশ ও পাঠ্যবইতে পড়ে এসেছি। বাসায় টুকটাক ব্যায়াম কিংবা ইয়োগা শুরু করুন। আপনার ঘরই হোক এইমুহূর্তে এলাকার সেরা ব্যায়ামাগার (gym)। বেশি বেশি ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ায় সচেতন হন।
  • প্রিয় মুসলিম ভাইয়েরা, প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়ের অভ্যাস গড়ে তুলুন। প্রতি সালাতে সবার জন্য দু’আ করুন, আপনার সারাদিন মন ভালো থাকবে।
  • লেখালেখির অভ্যাস বোধহয় সবারই আছে, কেননা আমাদের অতিবাহিত সময়ের একটি বড় অংশ ব্যয় করি সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখালেখি বা স্ট্যাটাসের মাধ্যমে। আপনি চাইলেই এই সোশ্যাল মিথষ্ক্রিয়াকে একটি ভালো স্কিলে পরিণত করতে পারেন। বিভিন্ন ব্লগ পড়ুন, এক-দু লাইন কবিতাও ডায়েরীতে টুকে নিতে পারেন।
  • ফেসবুকিং এর কথা কাউকে বলে দিতে হবে না জানি। তবে মাঝেমধ্যে দূরের বন্ধু কিংবা কাছের, সবার খোঁজখবর নিন। তাঁদের সাথে লাইভে কিংবা ভিডিও কলে গঠনমূলক আড্ডা দিন, তাঁদের পরিবারের খোঁজ-খবর নিন।
  • সবসময় বাসায় আম্মু বা বুয়া রান্না করে? কমবেশি সকলেই মায়েদের কাছ থেকে শুনেছি, “রান্না তো করিস না! তাই বুঝবি না।” ইউটিউব বা মায়ের সহযোগিতা নিয়ে বাসার সবাইকে রান্না করে খাওয়াতে পারেন, এবার না হয় নিজের কাজগুলো নিজেই বুঝে নিলেন। প্রথম দিন খাবারের স্বাদের প্রশংসা হয়তো পাবেন না, তবে এটি অনেকগুলো অর্জনের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।
  • সারাদিন ভিডিও গেইম খেলা অবশ্যই নেশার মতই একপ্রকার ব্যাধি। তবে গবেষণায় এসেছে, কিছু ভিডিও গেইম মানুষের দৃষ্টির সমন্বয়, উপস্থিত বুদ্ধিবিকাশ ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বাড়ায়। কাজেই, মাঝেমধ্যে অল্পসময়ের জন্য ভিডিও গেইমিং খারাপ হবে না।
  • এছাড়া আপনার যদি কোকিল কণ্ঠ নাও হয়, একটু গলা ছেড়ে গান বা গজল গাওয়ার চেষ্টা করতেই পারেন। এই সাথে একটি ছোট্ট উপদেশ, মানুষ মদ বা ধূমপান ছাড়া বাঁচতে পারে সেটাও প্রমাণ করে দেখিয়ে দিতে পারেন।