ছাদবাগানে পেয়ারার ফলন বাড়ানোর কৌশল

পেয়ারা  ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ একটি জনপ্রিয় ফল। বাংলাদেশের আবহাওয়া পেয়ারা চাষের জন্য উপযুক্ত এবং দেশের সর্বত্রই কম বেশি পেয়ারা ফলন হয় । শহুরে জীবনে শখের বসে কিংবা বিশুদ্ধ হাওয়ার কথা ভেবে অনেকেই ছাদে বা বারান্দায় বাগান করেন। ভিটামিনের চাহিদা পূরণে বাগানে একটি পেয়ারা গাছের বিকল্প নেই। তবে অনেকেই গাছে ফল ও ফুল ধারণের এমন সমস্যার কথা বলে থাকেন। পেয়ারা গাছে ফলধারণের জন্য কৃষি বিজ্ঞানীরা বেশ কয়েকটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। সেগুলো হলো –

শিকড় উন্মুক্তকরণ পদ্ধতি

এ পদ্ধতিতে পেয়ারা গাছের গোড়ার মাটি তুলে  আলগা শিকড়গুলো বের করে নাড়াচাড়া দিতে হবে।

  • গাছের গোড়ার ০১ -১.৫ মিটার পর্যন্ত মাটি কোদাল, শাবল বা নিড়ানি দ্বারা খুব ভালোভাবে মাটি আলগা করে দিতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে যাতে গাছের শিকড়গুলো কেটে না যায়।
  • গোড়ার মাটি উন্মুক্ত করার পর কমপক্ষে ১০-১৫ দিন পরিচর্যা পরিমাণমতো সার ও সেচ ব্যবস্থা নিশ্চিত করে পরিচর্যা করতে হবে।

এপ্রিল-মে মাসে পেয়ারা গাছে শিকড় উন্মুক্ত করতে হয়। এর ফলে পেয়ারা গাছে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে ফলের দেখা মিলে।

হরমোন প্রয়োগ

 হরমোন প্রয়োগ করার উপযুক্ত সময় এপ্রিল-মে মাস। হরমোন গাছের পাতায় প্রয়োগ করতে হয়।

  • পেয়ারা গাছে হরমোন প্রয়োগের জন্য সাধারণত ২-৫ বছর বয়সী গাছ নির্বাচন করতে হয়।
  • হরমোন জাতীয় পদার্থ  ২,৪-ডি; ন্যাপথালিন এসিটিক এসিড (NAA), ১০% ইউরিয়ার দ্রবণ ইত্যাদি  ব্যবহার করা হয়।
  • স্প্রে মেশিন বা ফুটপাম্প দিয়ে খুব ভালো করে পেয়ারা গাছের পাতা ভিজিয়ে দিতে হবে।  

 শাখাপ্রশাখা বাঁকানো পদ্ধতি

শাখা-প্রশাখা বাঁকানো পদ্ধতি এমন একটি নতুন প্রযুক্তি যার ফলে পেয়ারা গাছ থেকে প্রায় দশগুণ বেশি ফলন পাওয়া যায় ।গাছের বয়স ১.৫-২ বছর হলেই এ পদ্ধতি শুরু করা যাবে এবং পাঁচ থেকে ছয় বছর পর্যন্ত এ পদ্ধতিতে ফলন বাড়ানো যায় ।

  • ডাল বাঁকানোর ১০ থেকে ১৫ দিন আগে গাছের গোড়ায় সার ও পানি দিতে হয়। ডাল বাঁকানোর সময় প্রতিটি শাখার অগ্রভাগের প্রায় এক থেকে দেড়ফুট অঞ্চলের পাতা ও ফুল-ফল রেখে বাকি অংশ ছেটে দিতে হয়। এরপর ডালগুলোকে সুতা দিয়ে বেঁধে তা বাঁকিয়ে মাটির কাছাকাছি খুঁটির মাধ্যমে মাটিতে বেঁধে দিতে হয় ।
  • গ্রীষ্মকালে মাত্র ১০ থেকে ১২ দিন পরেই নতুন ডাল গজানো শুরু হয়। নতুন ডাল ১ সেমি. লম্বা হলে বাঁধন খুলে দেয়া হয়। হেমন্তকালে নতুন ডাল গজাতে ২০ থেকে ২৫ দিন সময় লাগে। ডাল বাঁকানোর ৪৫ থেকে ৬০ দিন পরে ফুল ধরা শুরু হয়। এভাবে গজানো প্রায় প্রতি শাখায়  ফুল আসে।

অঙ্গ ছাঁটাইকরণ  

গাছের রোগাক্রান্ত ও অপ্রয়োজনীয় ডালপালা ছাঁটাই করাই হলো অঙ্গ ছাঁটাইকরণ ।

  • রোপণকৃত চারা বা কলমের আকার, আকৃতি ও কাঠামো সুন্দর করার উদ্দেশ্যে মাটি থেকে ১.০ থেকে ১.৫ মিটার ওপরে বিভিন্ন দিকে ছড়ানো ৪ থেকে ৫টি ডাল রেখে গোড়ার দিকের সব ডাল ছাঁটাই করে দিতে হবে।

পেয়ারা গাছে ফলধারণের পদ্ধতিগুলো প্রয়োগের মাধ্যমে পেয়ারা গাছ থেকে বছরব্যাপী ফল পাওয়া যায়। এসব পদ্ধতি অবলম্বন করলে অনেকসময় গাছের পাতা লালচে হয়ে ঝড়ে যেতে পারে। পরবর্তীতে গাছের সঠিক পরিচর্যা নিলে নতুন পাতা জন্মাবে এবং ফলধারণ হবে। তাছাড়া এইসব প্রযুক্তিতে বছরের বার মাসই পেয়ারা গাছে ফল ধরানো সম্ভব হয়।