কিভাবে নিবেন শখের অর্কিডের যত্ন

ফুলের বিচিত্রতা আর স্থায়ীত্বের দিক থেকে অর্কিড অন্যতম একটি গাছের নাম। এর প্রধান আকর্ষন একবার ফুল ফুটলে ১৫-৩০ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয় অর্কিড ফুল।

কোন কোন ক্ষেত্রে এর বেশীও হতে পারে। পৃথিবীতে আড়াই হাজারের বেশী প্রজাতির অর্কিড রয়েছে। যার মধ্যে বেশীরভাগই পরাশ্রয়ী।তবে কিছু গ্রাউন্ড অর্কিডও আছে যা মাটিতে হতে পারে। যেসব অর্কিড অন্যান্য ফুলের মতো মাটিতে জন্মায় এবং সেখান থেকে খাদ্য ও রস সংগ্রহ করে, তাদের পার্থিব অর্কিড বলে। এদের সুতার মতো সরু গুচ্ছ মূল থাকে। যেমন- ফায়াস, সিমবিডিয়াম, লেডি স্লিপার ইতাাদি

গৃহসজ্জা হোক বা অফিস, শখের ছাদ বাগান বা কোন অনুষ্ঠানের মঞ্চ প্রায় সবখানেই এই মন মাতানো অর্কিডের রয়েছে বিশেষ কদর। আপনি যেখানেই অর্কিড চাষ করুন না কেন অধিক স্থায়িত্বের ফুল ও সতেজ গাছ পেতে আপনার শখের অর্কিডের চাই সঠিক যত্ন। তাহলে চলুন জেনে নিই কি পরিচর্যায় ভালো থাকবে আমাদের পছন্দের অর্কিড গাছ ও ফুল।

প্রজাতি

 ২৫০০০ হাজারের ও বেশি প্রজাতি নিয়ে অর্কিড হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ সপুষ্পক উদ্ভিদের একটি গোত্র। মজার ব্যাপার এই উদ্ভিদগুলোর প্রতিটি ফুল, একটি অন্যটির চেয়ে ভিন্ন, স্বকীয়তা বজায় রাখে এবং সাধারণ উদ্ভিদের ফুলের তুলনায় কাটা অবস্থাতেই দীর্ঘদিন সতেজ থাকতে পারে। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত অর্কিডের প্রজাতি চিহ্নিত হয়েছে ১৮৭টি। সে হিসেবে এখানকার ১৭ শতাংশ অর্কিড এখন বিলুপ্ত। বাস্তুসংস্থানে অর্কিডের অনন্য অবস্থান এবং এর ভেষজ, উদ্যানতাত্ত্বিক ও সৌন্দর্যমূল্য বিবেচনায় নিয়ে এ ক্ষতিকে শঙ্কাজনক মনে করছেন গবেষকরা। চাষ পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে অর্কিড প্রধানত ২ প্রকার। পার্থিব বা Terrestrial।

বিদেশী প্রজাতির মধ্যে ডেনড্রবিয়াম, ভেন্ডা, মুকরা অন্যতম। দেশী প্রজাতির মধ্যে এগ্রিগেটাম, এরাইডাস, ফক্সটেল, পিয়ারাড্ডি, ভেন্ডা, বাল্বেফাইলাম, পেনসিল উল্লেযোগ্য।

পট মিডিয়া

সাধারণত মাটির টব, কাঠের ঝুড়িতে অর্কিড ভাল হয়। মিডিয়া হিসাবে নারিকেল ছোবড়া, ইটের টুকরো, গাছের ছাল ব্যবহার করা হয়। অর্কিডের প্রকার ভেদে এসব মিডিয়া ব্যবহার করা হয়ে থাকে। শুধুমাত্র কাঠের সাথেও অর্কিড সেট করা যায়। বর্ষাকালে নারিকেল ছোবড়ার সাথে অর্কিড বেধে দিলে সহজেই শিকর বের হয়ে মিডিয়ার সাথে সেট হয়ে যায়। টবে সেট করার ক্ষেত্রে নাকিরলে ছোবড়া টুকরো করে কেটে সাথে গাছের ছাল বা বাকল ও কিছু ইটের টুকরো দিয়ে পটিং করলে অর্কিড সেট হয়ে যায়।

পানি দেয়া/ সেচ

অর্কিডে উপর থেকে কখনোই পানি দেয়া যাবেনা। কারন এতে করে ফুলের কুড়িতে ও পাতার ফাঁকে পানি জমে থাকে। যা আপনার শখের অর্কিডে পচন ধরাতে সাহায্য করে। যদি কখনো পানি দিতে গিয়ে অর্কিড গাছ সম্পূর্ণ ভিজে যায় তবে সাথে সাথেই একটি পেপার ট্যিসু দিয়ে তা যথা সম্ভব মুছে শুকনো করে নিন।

টবের জমে থাকা পানি অপসারণ

অর্কিড বেশি পানি সহ্য করতে পারেনা। আর বিশেষ করে ফুটন্ত অর্কিড এর টব বা পাত্রে কোনভাবেই অতিরিক্ত পানি জমে থাকতে দেয়া যাবেনা। টবের অতিরিক্ত পানি যাতে খুব সহজেই বেরিয়ে যায় সেদিকে বিশেষ ভাবে লক্ষ্য রাখুন।

ঠান্ডা পানি না দেয়া

অর্কিড এর বেশিরভাগ প্রজাতিই খুব স্পর্শকাতর। খুব ঠান্ডা পানি অর্কিডের মূলের ক্ষতি করে থাকে। সব সময় অর্কিডে সাধারন নাতিশীতোষ্ণ পানি সর্বরাহ করুন। বরফ টুকরো দিয়ে ইন্ডোর প্লান্টে পানি দেয়ার পদ্ধতি অন্তত অর্কিডের ক্ষেত্রে পরিত্যাজ্য।

খাবার সর্বরাহ

সঠিক পরিমানের উপযুক্ত খাবার আপনার অর্কিডের গাছ ও ফুলের জন্য অপরিহার্য। যা অর্কিডের জীবনকাল ও লাবন্য বাড়িয়ে দেবে বহুগুণ। মাসে অন্তত একবার অর্কিডের গাছে খাবার দিন। আপনি যে কোন সুপার শপে অর্কড ফুড কিনতে পাবেন বা অনলাইন শপেও অর্ডার করতে পারেন।

লেগে থাকা ডাল আলাদা না করা

অর্কিডের গোঁড়ার দিকে ডাল গুলো একসাথে চাপাচাপি করে লেগে থাকে। এগুলো অর্কিডের পাওয়ার হাউস বা ব্যাটারির মত কাজ করে। অর্কিডের ভালো বৃদ্ধি আশা করলে কখনোই এইগুলা আলাদা করা যাবেনা।

প্রচলিত টবের মাটি পরিহার

সাধারণত আমরা যেসব অর্কিড চাষ করি তার বেশিরভাগ প্রজাতিই পরগাছা বা পরজীবী। আর সচরাচর টবে চাষ করার জন্য যে মাটি ব্যবহার করা হয় তা অর্কিডের জন্য উপযোগী নয়। তাই প্রচলিত টবের মাটি পরিহার করাই অর্কিডের জন্য উত্তম। উপরন্তু টবের মাটি অর্কিডের শ্বাসপ্রশ্বাস কার্য সঠিক ভাবে পরিচালনা করতে বাঁধা দেয়। এই জন্য নারেকেলের ছোঁবরা, ইটের খোয়া ইত্যাদি বস্তুই উপযুক্ত।

পরিবশে

অতিরিক্ত তাপমাত্রা অর্কিডের জন্য সুখকর নয়। তাই সরাসরি সূর্যের আলোতে অর্কিডের টব বা পাত্র না রাখাই ভালো। অপেক্ষাকৃত কম তাপমাত্রা আর ছায়াযুক্ত স্থানে জায়গা করে দিন আপনার শখের অর্কিডের। সাধারণত অর্কিড ছায়া পছন্দ করে। তাই অর্কিডকে ছায়াযুক্ত স্থানে অথবা শেডের নীচে রাখাতে হয়। এক্ষেত্রে পলি শেড না দিয়ে নেট শেড ব্যবহার করা হয়। তবে সকাল ও বিকালের হালকা রোদ অর্কিডের জন্য উপকারী। অর্কিড যাতেপর্যাপ্ত আলো-বাতাস পায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

ফুল না ভেজানো

কিছু কিছু ক্ষেত্রে অর্কিডের পাতা অল্প সময়ের জন্য ভিজিয়ে দেয়া ভালো হলেও কখনোই ফুল ভেজানো অর্কিডের জন্য উপকারী নয়। ফুল ভেজালে তার স্তায়িত্ব কমে যায় এবং এতে করে খুব দ্রুত ফুলে পচন ধরে।

আদি শিকড় না কাটা

অর্কিডের আদি শিকড় বা এ্যরিয়েল রুট এর জীবন ধারনের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। অনেক অর্কিড এমন মূল দ্ধারা শ্বাসকার্য চালায় আর এটি খুব সাধারন প্রাকৃতিক নিয়ম। তাই এগুলোকে না কাটাই শ্রেয়।

সার

অর্কিডে প্রয়োগকৃত সার হিসেবে অসমোকোট, এনপিকে, রুট হরমোন ব্যবহার যোগ্য। গাছে ছত্রাকের আক্রমন থেকে রক্ষা পেতে মাসে দু’একবার যে কোন ছত্রাকনাশক স্প্রে করা ভাল।

রোগবালাই ও পোকামাকড় দমন

 টব, কন্দ, শিকড় সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা চাই। ১০-১৫ দিন পর পর গাছে-সেভিন পাউডার ছড়িয়ে দেয়া উচিত। তাহলে পিঁপড়া, পোকামাকড়ের উপদ্রব থেকে রেহাই পাওয়া যাবে। আঁশ পোকা ও মাকড়সার উপদ্রব দেখলে সাবান পানি ছিটানো উচিত। থ্রিপস, মিলিবাগ ও এফিডের জন্য ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি ২ মিলি. হারে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭-৮ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে। ইঁদুরের উপদ্রব হলে বিষটোপ ব্যবহার করা যেতে পারে। পাতায় ও পেটালের ব্লাইট রোগ হলে আক্রান্ত পাতা ও পেটাল পচে যায়। রোগাক্রান্ত হলে প্রতি লিটার পানির সঙ্গে ০.৫ মিলি. টিল্ট অথবা চা চামচের আধা চামচ ডাইথেন এম-৪৫ ভালোভাবে পানিতে মিশিয়ে প্রতি ৭-১০ দিন পর পর গাছে স্প্রে করতে হবে। ০.৫ মিলি. টিল্ট মাপার জন্য অনেক সিরাপ জাতীয় ওষুধের সঙ্গে ড্রপার দেয়া থাকে, তার সাহায্যে মাপা যাবে।

টব বা পাত্র পরিবর্তন

অর্কিড গাছ দুর্বল হলে ও শিকর ক্ষতিগ্রস্থ হলে টব পরিবর্তন করা প্রয়োজন হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী ১/২ বছর পর পর টব পরিবর্তন করা যেতে পারে। বর্ষকালে টব পরিবর্তনের উত্তম সময়।টব থেকে পুরাতন গাছ তুলে গাছ ধুয়ে পরিস্কার করতে হবে। পরে ফাংগিসাইড স্প্রে করে পানি শুকানো পর্যন্ত ছায়ায় রাখলে ভাল ফল পাওয়া যায়। এরপর নতুন মিডিয়া দিয়ে অর্কিড পটিং করতে হয়।আর অবশ্যই পাত্র পরিবর্তনের সময় মৃত শিকড় কেটে বাদ দিতে হবে।

তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট