জি জি গাছের পরিচর্যা

শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে আসছে জিজি প্ল্যান্ট যা জেডজেড প্ল্যান্ট নামেও পরিচিত , যার উৎপত্তি খরা প্রবণ আফ্রিকাতে । কয়েক দশক আগে, দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থিত ডাচ নার্সারিগুলি উদ্ভিদটির প্রচার শুরু করে এবং ১৯৯৬  সালে এটি সারা বিশ্বে বিতরণ শুরু করেছিল। তখন থেকে, জেডজেড উদ্ভিদ বিশ্বব্যাপী মানুষের হৃদয়,  বাড়ি এবং অফিসে স্থান করে নিয়েছে।

 জি জি প্ল্যান্ট কেন জনপ্রিয়

এই উদ্ভিদ, তার প্রশস্ত, আকর্ষণীয়, গাঢ় সবুজ পাতা সহ, অফিস এবং বাড়ির জন্য অনেক অনুকূল বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন। জেডজেড উদ্ভিদের মোমযুক্ত, মসৃণ পাতা সূর্যের আলোকে প্রতিফলিত করে এবং ঘরকে উজ্জ্বল করে। জেডজেড সাধারণত দুই থেকে তিন ফুট উচ্চতা এবং প্রস্থে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় ।

জেডজেড প্ল্যান্ট একটি বায়ু পরিশোধক এবং নাসার একটি গবেষণায় গবেষকরা দেখেছেন যে এটি বিশেষভাবে বায়ু থেকে জাইলিন, টলুইন এবং বেনজিনের মতো প্রচুর পরিমাণে টক্সিন অপসারণে পারদর্শী।

 জি জি প্ল্যান্ট কোথায় রাখবেন

জেড জেড প্ল্যান্ট একটি আদর্শ  ঘরের গাছ। এ গাছটি সহজে মরে না , কম আলোতে বেঁচে থাকতে পারে , তেমন যত্নের প্রয়োজন হয় না , মাসে ২বার পানি দিলেই চলে ,ঘরের বাতাস কে বিশুদ্ধ রাখে ,ঘরের অক্সিজেনের পরিমান বাড়ায়। বলা যায়, জেড জেড প্ল্যান্ট একটি আদর্শ  ঘরের গাছ।

জি জি প্ল্যান্টের বিভিন্ন প্রকার

১.রেভেন জেডজেড – এই জেডজেড গাছের পাতাগুলি মিশি-কালো রঙের হয়। নতুন পাতাগুলি প্রথমে হালকা সবুজ রঙের থাকে ।

২.জেডজেড ‘জেনজি’ – এই জেডজেড গাছের পাতাগুলি কোঁকড়ানো এবং কাণ্ডের শীর্ষে পাতা ঘন থাকে ।

৩.বামন জেডজেড উদ্ভিদ বা ‘জ্যামিক্রো’ – সাধারণ জেড জেড প্ল্যান্টের চেয়ে ছোট। এটি দুই ফুট (৫০ সেন্টিমিটার) এর বেশী লম্বা হয় না।

৪.লাকি ক্লাসিক’ – পাতাগুলো কিছুটা গোলাকৃতি হয়।

৫.ভেরিগেটেড জেডজেড প্ল্যান্ট- সবুজ হলুদাভ পাতা দেখা যায়।

বিড়াল এবং কুকুরের জন্য বিষাক্ত ।এটি খেয়ে ফেললে পোষা প্রাণীদের কিছুটা হজম সমস্যা হবে তবে এটি মারাত্মক কিছু না।

জি জি প্ল্যান্টের জন্য আলো

জেডজেড প্ল্যান্ট পরোক্ষ আলো পছন্দ করে ।তবে এটি কম আলোতে টিকে থাকতে পারে। সরাসরি সূর্যের আলোতে পাতা পুড়ে  যায়। খুব বেশি আলো ছাড়াই জেডজেড প্লান্ট বেঁচে থাকে।

জি জি প্ল্যান্টের জন্য পানির প্রয়োজনীয়তা কেমন

সাধারণত প্রতি ৭থেকে ১৪ দিন পর পর পানি  দেওয়া ভাল। মাটি শুকিয়ে গেলে পানি দিতে হবে । অতিরিক্ত পানি দিলে শিকড় পচে যায় এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যু হতে পারে।গাছটি বৃষ্টির পানি পছন্দ করে ।

জি জি প্ল্যান্টের জন্য পানির প্রয়োজনীয়তা সার

এই গাছে তেমন সারের প্রয়োজন হয় না ।তবে মাসে একবার বা দু’বার সার দেয়া ভালো ।এক্ষেত্রে NPK বা জৈবসার দেয়া যায়। (শীতে দেয়ার প্রয়োজন নেই।)

জি জি প্ল্যান্টের উপযুক্ত মাটি

কোকো ডাস্ট,পার্লাইট ,লাল বালির ও ভার্মি কম্পোস্টের মিশ্রণ জেড জেড প্ল্যান্টের  জন্য আদর্শ মাটি । টবের পাত্রের নীচে অবশ্যই ভালো পানি নিষ্কাশনের ব্যাবস্থা থাকতে হবে ।

জি জি প্ল্যান্টের রি-পটিং

বিশেষত শেকড় টবে বেশী হলে প্রথম 3 – 5 বছরের মধ্যে পুনরায় টব পরিবর্তন করতে হবে । তবে বছরে একবার বসন্তের শুরুতে রিপট বা পাত্র পরিবর্তন করা ভালো ।

 জি জি প্ল্যান্টের বংশবৃদ্ধি

গাছটির যে কোনও অংশ থেকে নতুন গাছ তৈরী করা যায় ।রাইজোমগুলি(শেকড়) ভাগ করে বা পাতার মাধ্যমে বা কান্ডের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করা যায় ।তবে পাতাদিয়ে প্রজনন করলে শেকড় আসতে বেশ সময় লাগে।

জি জি প্ল্যান্টের সম্ভাব্য সমস্যা

লক্ষনঃ নিচের  পাতাগুলি অল্প পরিমাণে হলুদ হয়ে যাওয়া এবং পড়া বেশ স্বাভাবিক।

কারণঃ অতিরিক্ত পানি

লক্ষনঃ পাতার কর্নার বাদামী হয়ে যায়

 কারণঃ বাতাসে আর্দ্রতার পরিমান কম ।

লক্ষনঃ পাতার উজ্জলতা কমে যায়

কারণঃ পাত্রটি খুব ছোট এবং ভিতরের চারদিকে শিকড়ের বেশী হয়ে গেলে গাছটির  শ্বাসরোধ হয়।

জি জি প্ল্যান্টের পাতা ময়লা  হলে করণীয়

১কাপ ঘরের তাপমাত্রার পানিতে আধা চা চামচ বাসন মাজার লিকুইড ডিটারজেন্ট মিশিয়ে একটি নরম কাপড়ে নিয়ে পাতার দুই পাশ পাতার নিচে হাতের সাপোর্ট দিয়ে মুছে দিলে গাছের সালোকসংস্লেশন ভালো হয় সাথে পোকার আক্রমন হতে গাছকে রক্ষা করা যায়।

শীতে জি জি প্ল্যান্টের যত্ন

শীতে এ প্ল্যন্টের বৃদ্ধি সুপ্ত অবস্থায় থাকে ।এজন্য শীতে জেডজেড প্লান্টে  মাসে একবার পানি দেয়া ভালো। শীতে  সার দেয়া প্রয়োজন নেই।খুব বেশী ঠান্ডা পানি দেয়া যাবে না ।সাধারন তাপমাত্রার পানি দিতে হবে।