
সবজি ও ফল হিসেবে টমেটোর জনপ্রিয়তা ঠিক কতটা তা আমরা সবাই জানি। এই সবজিকে অনেকেই ফল ও বলে থাকেন। বাঙালির কাছে টমেটো বাংলার আপেল নামেও পরিচিত এর পুষ্টি গুণাগুণের বিচারে। আপনার বাসার বারান্দায় বা ছাদের টবে দুটি চারা লাগিয়ে আপনি অনায়াসে পরিবারের চাহিদা পূরণ করতে পারবেন। এছাড়াও জ্যাম, জেলি, চাটনি বানিয়ে টমেটো সারা বছর সংরক্ষন করা যায়। বাসায় টবে লাগিয়ে যেভাবে টমেটো চাষ করবেন চলুন জেনে নেয়া যাক-
মাটি প্রস্তুতকরণ
টমেটো চারা বেলে দোআঁশ মাটিতে সবচেয়ে বেশি ফলন দেয়। উর্বর বেলে দোআঁশ মাটি চাষের জন্য নির্বাচন করুন। প্রথমে ২ ভাগ মাতে একভাগ গোবর ও কিছু টিএসপি সার মিশিয়ে ১০-১২ দিন খোলা জায়গায় ফেলে রাখুন। এরপর ছোট পলিব্যাগে প্রস্তুতকৃত মাটি ভরে বীজ লাগিয়ে চারা তৈরি করে নিন। টবে অথবা ড্রামে অথবা ছোট কন্টেইনার অথবা ছোট বস্তায় প্রস্তুতকৃত মাটি পরিপূর্ণ ভাবে ভরে ৩০-৩৫ দিনের ট্মেটো চারা পুনরায় চারা রোপণ করুন।
টমেটোর জাত বাছাই
বাংলাদেশে বিভিন্ন জাতের টমেটো আছে। তবে তাঁর মধ্যে তিনটি ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে
আগাম জাতঃ
বারি টমেটো ৪, বারি টমেটো ৫, রোমা ভিএফ, রোমারিও, টিপু সুলতান, গ্রেট পেলে, ডেল্টা এফ ১, উন্নয়ন এফ ১, পুষারুবী, নিউ রূপালী এফ ১ ইত্যাদি।
ভরা মৌসুমী জাতঃ
মানিক, রতন, বারি টমেটো ৩, বারি টমেটো ৬, বারি টমেটো ৭, বারি টমেটো ৯, বাহার, মহুয়া ইত্যাদি জাতকে বেছে নেয়া যেতে পারে।
নাবি শীত মৌসুমী জাতঃ বাহার, রোমা ভিএফ, রাজা, সুরক্ষা ইত্যাদি জাত নাবি চাষের জন্য ভাল।
সারা বছর চাষের উপযোগি জাতঃ বারি টমেটো ৬(চৈতী)চাষ করা যায়।
গ্রিষ্মকালীন চাষের উপযোগি জাতঃ বারি টমেটো-৪, বারি টমেটো-৮, বারি টমেটো-১০
টমেটো চারা রোপনের সঠিক সময়
জাত ভেদে চারা রোপনের সময় ভিন্ন হয় । শীতকালীন টমেটো জন্য সাধারণত অক্টোবর মাস থেকে মধ্য জানুয়ারি মাসের মধ্যে বীজ বুনতে হয়। এবং অক্টোবর মাস অথবা নভেম্বর মাসে এই বীজ থেকে চারা রোপন করা যায়। আবার গ্রিষ্মকালীন টমেটো চারা চৈত্র- বৈশাখ মাসে রোপন করতে হয়। বীজ বোনা থেকে শুরু করে গাছের প্রথম ফল পাকা পর্যন্ত কমপক্ষে ১০০ দিন লাগে এবং ফলধারণ জাতভেদে ৩০-৬০ দিন স্থায়ী হয়।
টমেটো সারাবছর জুড়ে চাষ করা যায়। সঠিক জাত নির্বাচন করে আপনার বাগানের টবে লাগানো চারা সারাবছর টমেটোর চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে।
রোগবালাই দমন
টমেটো গাছের পাতা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হলে পাতা কুঁকড়ে যায়। এক গাছ আক্রান্ত হলে কিছুদিনের মধ্যেই অন্য গাছও আক্রান্ত হয়। একসময় সমস্ত বাগানে ছড়িয়ে পড়ে।যেহেতু ভাইরাসজনিত রোগ প্রতিরোধের কোন ওষুধ নাই তাই আক্রান্ত গাছ পেলে তা নষ্ট করে ফেলতে হবে।
এছাড়াও গোড়া পঁচা রোগ হলেও ,আক্রান্ত গাছ উপড়ে ফেলতে হবে। আক্রান্ত গাছ অবশ্যই দূরে কোথাও ফেলতে হবে ।
পোকামাকড় দমন
হোয়াইটফ্লাই বা সাদা জাবপোকা দ্বারা ভাইরাস জনিত সমস্যা দেখা দেয়।তাই এ পোকা দমন করতে হলে গাছকে জাল বা মশারি দিয়ে আবৃত করে দিতে হবে। টমেটো গাছে পোকার উপদ্রব হলে সাবান পানি স্প্রে অথবা ছাই ছিটিয়ে দিলে পোকা চলে যায়।
সার প্রয়োগ
টমেটো গাছে সাধারণত জৈব সার বেশী ব্যবহার করা হয়। যেমন গোবর সার, কম্পোস্ট, রান্নাঘরের সবজির খোসা, ডিমের খোসা জাতীয় জিনিস গুলো সার হিসেবে ব্যবহার করা উত্তম । এছাড়া অজৈব সার হিসেবে ইউরিয়া, টিএসপি সার ব্যবহার করা ।
অন্যান্য পরিচর্যা ও অধিক ফলনের উপায়
- চারা গাছের গোড়ায় পানি জমতে দেয়া যাবে না।
- টবে চারা রোপন করে শীতকাল হলে হবে আর গরমকাল হলে হালকা রোদে রাখতে হবে
- বৃষ্টির দিনে গাছকে বৃষ্টিতে রাখবেন না।
- চারাগাছটিকে শক্ত কাঠির সাথে বেঁধে দিতে হবে।
- গাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি দিতে হবে।
- গাছকে কমপক্ষে ৬/৭ ঘন্টা রোদের নিচে রাখতে হবে।
- একটি পাত্রে একটির বেশি টমেটোর চারা দেয়া যাবে না। বড় আকৃতির টব হলে সেক্ষেত্রে ২-৩ টি চারা লাগানো যাবে।
- নিচের পাতা এবং কিছু ডাল ফেলে দিতে হবে । যাতে গাছটি বেশী ঝোপড়া না হয়ে যায় ।
- টবের মাটি কয়েকদিন পর পর হালকা নিড়ানি দিয়ে আলগা করে দিতে হবে ।
টমেটো সংগ্রহ
টমেটোর ফল পাকার পর লাল রঙ ধারন করে সেই সময়ে ফল সংরক্ষন করতে হয়। এছাড়া ফলের নিচে ফুল ঝরে যাওয়ার পর যে দাগ থাকে ঐ স্থান থেকে লালচে ভাব শুরু হলেই ফল সংগ্রহ করা যাবে। এই ফল অনেকদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.