বিশুদ্ধ বায়ুর নিশ্চয়তা দেবে যেসব ইনডোর প্ল্যান্ট

সুস্থ ও সুন্দর জীবনযাপনে বিশুদ্ধ বাতাসের বিকল্প কিছু নেই। স্টেট অফ গ্লোবাল এয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী ,দুষিত বায়ু আমাদের গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ, এর ফলে ২০১৬-১৭  সালে বিশ্বব্যাপী ৭ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।  বিভিন্ন ধরনের বায়ু বিশুদ্ধকারী ঘরোয়া উদ্ভিদ বা ইনডোর প্ল্যান্ট রয়েছে যারা ঘরের নান্দনিক সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করার পাশাপাশি অভ্যন্তরীন বায়ুর বিষাক্ত গ্যাস অপসারণ করে বিশুদ্ধ করে ও বাতাসের  গুণমান উন্নত করতে সহায়তা করে ।যা কিনা আমাদের স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। সেরকমই কিছু ইনডোর প্ল্যান্ট নিয়ে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক-

গোল্ডেন পথোস বা মানিপ্লান্ট

যে কোনো পরিবেশে বেঁচে থাকার বিশেষ  ক্ষমতা রাখে পথোস। আলো ছাড়াও বেঁচে থাকতে পারে, তেমন কোনো যত্নেরও প্রয়োজন হয় না। আপনার ঘরের যেকোনো কোনায় এই লতানো গাছটি দূষিত পদার্থ শোষণ করে বাতাসকে বাসযোগ্য করে রাখবে। এটি বেনজিন, ট্রাইক্লোরোইথিলিন, ফর্মালডিহাইড, জাইলিন শোষণ করে।

স্নেক প্লান্ট

নাসার গবেষণায় এই ‘গার্ডেন মাম’ বাতাস পরিশুদ্ধ করার জন্য অন্যতম সেরা একটি গাছ। এই গাছ ঘরের ভেতরের বাতাস থেকে প্রচুর পরিমাণ অ্যামোনিয়া, বেন্জেনে, ফর্মালডিহাইড, ট্রাইক্লোরোইথিলিন, জাইলিন দূর করে থাকে।

স্পাইডার প্লান্ট

এটি কার্বন মনোক্সইড, বেনজিন, ফর্মালডিহাইড, চামড়ায় ও রাবার থেকে নির্গত দূষণ শোষণ করে। গোড়ার মাটি শুকিয়ে গেলে এরপর পানি দিন। সরাসরি সূর্যের আলো থেকে দুরে রাখুন।

পিস লিলি

চমৎকার একটি বায়ু পরিশোধক গাছ। অল্প আলোতেই এই গাছ বেড়ে ওঠে। স্বাভাবিক পরিমাণে পানি দিলেই যথেষ্ট। ঘরের বাতাস থেকে বেনজিন, ট্রাইক্লোরোইথিলিন, ফরমালডিহাইড, জাইলিন শোষণ করে। এতে গ্রীষ্মে ফুটবে খুব চমৎকার সাদা ফুল। তবে বিড়াল, কুকুর আর বাচ্চাদের কাছে থেকে দুরে রাখুন এ গাছ। কারণ গলায় বা পেটে গেলে চুলকাবে।

বাঁশ পাম গাছ

বাতাস থেকে ফরমালডিহাইড পরিশোধন করার সবচেয়ে কার্যকরী গাছ হচ্ছে বাঁশ পাম গাছ। প্রচুর পরিমাণ বাতাস পরিশোধন করতে পারে। বাঁশ পাম গাছ বাতাস থেকে বেঞ্জিন, ফরমালডিহাইড, ট্রাইক্লোরোইথিলিন নামক বিষাক্ত দূষণ মুক্ত করে। এটি দেখতে ছোট নারিকেল গাছের মত। আসবাপত্রের পাশে ছায়া যুক্ত জায়গায় রেখে দিন। আসবাপত্র থেকে নির্গত দূষক পদার্থ শুষে নিবে।

অ্যালোভেরা

একটি দুর্দান্ত বাতাস  বিশুদ্ধকারী উদ্ভিদ। কিচেনে রান্না করার জন্য উচ্চতাপমাত্রা থাকে। এই তাপমাত্রা কমায় সে।  অ্যালোভেরা ৯০% ফরমালডিহাইড ও বেনজিন দূর করে বাতাসকে বিশুদ্ধ করে। এছাড়াও বাতাসের বিষাক্ত উপাদান নির্মূল করে বাতাসের গুনগত মান নিশ্চিত করে।

উইপিং ফিগ

এটি  ফিকাস ট্রি নামেও পরিচিত। নাসার গবেষণা অনুসারে, এই  ইনডোর প্ল্যান্ট – বাতাসে থাকা ফরমালডিহাইড এবং জাইলিন অপসারণে সক্ষম।

রাবার প্ল্যান্ট

ফিকাস ইলাস্টিক (সবচেয়ে বেশি রাবার প্ল্যান্ট, রাবার ট্রি বা রাবার ট্রি গাছ হিসাবে পরিচিত) এটি একটি জনপ্রিয় হাউজপ্ল্যান্ট  এর মোমের প্রলেপযুক্ত পাতার জন্য। গৃহপালিত হাউজপ্ল্যান্ট হিসাবে রাবার গাছ ছয় থেকে দশ ফুট লম্বা পর্যন্ত যে কোনও জায়গায় বৃদ্ধি পায়। রাবার প্ল্যান্ট তাদের অপ্রতিরোধ্য উচ্চতা এবং সুন্দর পাতার জন্য পরিচিত।

ডেভিলস আইভি

নাসার গবেষণা অনুযায়ী ডেভিলস আইভি বাতাস থেকে রাসায়নিক এবং অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থ বিশেষ করে বেনজিন, ফর্মালডিহাইড, জাইলিন এবং টলুইন অপসারণের পারদর্শী। এটি অন্য উদ্ভিদের তুলনায় রাতের বেলায় প্রচুর  অক্সিজেন উৎপাদন করে থাকে।

ড্রাগন প্ল্যান্ট

বিশুদ্ধকারী হিসেবে ড্রাগন উদ্ভিদটি বহুল প্রচলিত। ড্রাগন উদ্ভিদটি  আপনার বাসায়  ফার্নিচার বার্নিশের মাধ্যমে বাসার ভেতরের  বাতাসে ছড়িয়ে পড়া জাইলিন, ট্রাইক্লোরিথিলিন এবং ফর্মালডিহাইড অপসারণে অনেক প্রয়োজনীয় ভুমিকা রাখে। যে ঘরে কাজ করেন অথবা , শোবার ঘরে এটিকে রাখতে পারেন। 

নান্দনিক এই গাছগুলো ঘরে সাজিয়ে রাখার পাশাপাশি এটিও খেয়াল রাখবেন যাতে, গাছের গোড়ায় পানি না জমে। এই জমানো পানি থেকে পোকামাকড় বিশেষ করে মশার উপদ্রব হতে পারে।